পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়কে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে অ্যাখায়িত করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার মতে এমন অর্জনকে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ৬ উইকেটে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, ‘এটি অনেক বড় সাফল্য। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমরা সত্যিই খুশি। এই সফরে আসার আগে আমরা এখানে জয়ের জন্য মরিয়া ছিলাম। সবাই যেভাবে পারফর্ম করেছে তাতে সত্যিই খুশি।’
প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়ে বড় ফরম্যাটে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের বৃত্ত ভাঙতে পারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারানোর পর ১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন লিটন দাস। যা দেশের টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংসের একটি। প্রথম ইনিংস থেকে মাত্র ১২ রানের লিড পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটিংকে জ¦লে উঠতে দেননি টাইগার বোলাররা। ফলে ১৮৫ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। যা ৪ উইকেট হারিয়ে স্পর্শ করে ফেলে শান্তর দল।
শান্ত বলেন, ‘বোলিং ইউনিট খুব ভালো করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বোলারদের বোলিং অসাধারন ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে তারা যেভাবে নিজেদের কাজ করেছে সেই ফল তারা পেয়েছে। সবাই নিজেদের সাথে সৎ ছিল এবং তারা জিততে চেয়েছিলো। এটি আমাদের দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তারা এটি বজায় রাখবে।’
দুই টেস্টেই দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে বাংলাদেশের বোলাররা। প্রয়োজনীয় সময় ব্রেক-থ্রু এনে দিয়েছে তারা। যা দলের জয়ে বড় অবদান রাখে।
ওপেনারদের অবদানও অস্বীকার করার মত নয়। ব্যাটিংয়ের শুরুতে বাংলাদেশকে আত্মবিশ^াসের রসদ দেবার কাজটা ভালোভাবেই করেছেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। বিশেষভাবে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯৩ রানের দারুন এক ইনিংস খেলেছিলেন সাদমান। বোলিং সহায়ক উইকেটে সাদমানের উইকেট ধরে খেলাটা পাকিস্তানের বোলারদের হতাশায় ডুবিয়েছে। পরবর্তীতে প্রতিপক্ষের বোলিংকে স্বাচ্ছন্দ্যে সামাল দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাটাররা।
দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ওপেনার জাকিরের ঝড়ো শুরু বাংলাদেশকে লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে সাহস যুগিয়েছে।
শান্ত বলেন, ‘কিছু সমস্যার কারনে বাদ পড়েন আমাদের নিয়মিত ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। তবে সাদমান যেভাবে ব্যাট করেছেন বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে তার ৯৩ রান দারুন ছিলো। দ্বিতীয় ইনিংস প্রথম ছয়-সাত ওভার জাকির যেভাবে ব্যাট করেছে তখনই ম্যাচের লাগাম আমাদের কাছে চলে এসেছিলো। তাদের দু’জনের কাছ থেকে আমরা এমনটাই চাই।’
সিনিয়র খেলোয়াড়দের প্রশংসা করেছেন শান্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন তারা। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাদমানের তৈরি করে দেওয়া মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে ১৯১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম টেস্টের শেষ দিনে গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় টেস্টে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান লিটন। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরিও করেন তিনি। দলের প্রয়োজনে জ¦লে উঠেন মেহেদি হাসান মিরাজও। লিটনের সাথে ১৬৫ রানের অসাধারন জুটি গড়েন তিনি।
পাকিস্তানের সাথে সিরিজ জয় ভারতের বিপক্ষে পরের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য আত্মবিশ্বাস দিবে বলে জানান শান্ত। তিনি বলেন, ‘মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই, লিটন এবং মোমিনুল অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং তারা তাদের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে এবং আমি আশা করি ভারত সিরিজে আরও খেলবেন তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলে মেহেদি হাসান মিরাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। এই ধরনের কন্ডিশনে প্রথম ইনিংসে যেভাবে বোলিং করেছে এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছে সেটি আসলেই প্রশংসনীয়। আমি আগেও বলেছি শেষ কয়েকদিন যেভাবে অনুশীলন করেছে এবং কোচদের সাথে কথা বলেছিল এটি প্রশংসার দাবী রাখে। আশা করি এই সিরিজে যা করেছে ভারতের বিপক্ষেও একইরকম করবে সে।’
দলগত প্রচেষ্টায় পাওয়া সিরিজ জয় নিয়ে শান্ত আরও বলেন, ‘সবাই এই সিরিজে ভালো করেছে। এটা সম্পূর্ণভাবে দলীয় খেলা। বিশেষ করে যারা এই ম্যাচে খেলার সুযোগ পায়নি তাদের কথাও বলতে হচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা রান করে বা উইকেট নেয় তাদের কথা আমরা সবসময় বলি। কিন্তু বাকি চারজন না খেলেও মাঠের বাইরে থেকে দলকে পুরোপুরিভাবে সহায়তা করছে। এটা দারুন ব্যাপার। আমরা এভাবেই সাফল্য পেতে চাই। আশা করি এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’