মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

কর্পোরেট জগতে সৌজন্য ও নম্রতা সাফল্যের পথে অদৃশ্য শক্তি

মীর হাসিব মাহমুদ
মীর হাসিব মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট - NKVC

কর্পোরেট জগতে সফলতা অর্জনের জন্য মেধা, দক্ষতা, এবং কঠোর পরিশ্রম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সৌজন্য ও নম্রতার মতো দক্ষতাগুলোরও একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যখন আমরা কর্পোরেট বা পেশাগত জীবন নিয়ে কথা বলি, তখন সাধারণত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং পেশাদারিত্বের প্রসঙ্গ উঠে আসে। কিন্তু সৌজন্যতা ও নম্রতার মতো আচরণগত গুণাবলীর গুরুত্ব অনেক সময়েই অবহেলিত থেকে যায়। অথচ, এই গুণগুলো কর্মক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য।
সৌজন্যতা কেবলমাত্র একটি আচরণ নয়, এটি পেশাদারিত্বের সূচকও বটে। ধরুন, আপনি একটি মিটিংয়ে আছেন এবং একজন সহকর্মী তার মতামত প্রকাশ করছেন। আপনি যদি তার কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং তাকে সম্মান দিয়ে তার মতামতের উপর আলোচনা করেন, তাহলে এটি আপনার পেশাদারিত্বের একটি নিদর্শন হবে। এই ধরনের আচরণ কর্মক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Apple Inc. -এর বর্তমান সিইও, টিম কুকের নেতৃত্বে কীভাবে কোম্পানি উন্নতি করছে, তা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু এর পিছনে কেবল টিম কুকের প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, তার সৌজন্যতা ও নম্রতাও একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তার সহকর্মীরা বলে থাকেন, টিম কুক একজন মনোযোগী শ্রোতা, যিনি প্রতিটি মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং কাজের পরিবেশকে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ রাখেন। এর ফলে, কর্মীরা তাকে শ্রদ্ধা করে এবং তাকে অনুসরণ করতে উৎসাহিত হয়।
রিচার্ড ব্র্যানসন এর মতো সফল উদ্যোক্তারা সবসময় তাদের কর্মীদের সম্মান দেন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। Virgin Group-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্র্যানসন বলেন, “Treat your employees as you would want to be treated. Train them well enough so they can leave, treat them well enough so they don’t want to.” ব্র্যানসনের এই দৃষ্টিভঙ্গি তার কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী আস্থা তৈরি করেছে, যা Virgin Group-এর সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ।
নম্রতা অফিসে বস বা নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। ধরুন, একটি প্রকল্পে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং আপনি এর সমাধান খুঁজতে সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করছেন। আপনি যদি নম্রভাবে তাদের মতামত শোনেন এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন, তাহলে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে এবং তারা আপনাকে সহায়তা করতে আরও বেশি আগ্রহী হবে। এর ফলে পুরো দলটি সমন্বিতভাবে সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে।

ইলন মাস্কের মতো নেতারা সবসময় তাদের টিমের সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। SpaceX এবং Tesla-এর সিইও ইলন মাস্ক বলেন, “I always hire people smarter than me and listen to their advice.” তার এই নম্রতার কারণে দলটি তাকে সম্মান করে এবং প্রতিটি প্রকল্পে তাদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে।
ধরা যাক, একটি প্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করেই একটি বড় আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এই সময়ে কোম্পানির সিইও একটি ওপেন ফোরামে কর্মীদের সামনে এসে নিজের দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। তিনি নিজের মনোভাব নম্রভাবে প্রকাশ করে তাদের সান্ত্বনা দেন এবং সংকট মোকাবিলার জন্য সবার কাছ থেকে সহযোগিতা চান। এই নম্র আচরণের কারণে কর্মীরা আরও মনোযোগী হয়ে উঠে এবং সংকট কাটিয়ে উঠতে সমবেতভাবে কাজ করে।
একটি উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একজন জুনিয়র কর্মী তার সিনিয়রের সাথে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। সিনিয়রটি সবসময় তার মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তার প্রতিটি প্রস্তাবনা মনোযোগ সহকারে শোনেন। এই ধরনের সৌজন্যপূর্ণ আচরণের কারণে, জুনিয়র কর্মীটি কাজের প্রতি আরও নিবেদিত হয়ে উঠে এবং তার দক্ষতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে, কোম্পানির সামগ্রিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়।

সৌজন্য ও নম্রতা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সফলতার জন্য নয়, এটি টিম বিল্ডিংয়ের জন্যও অপরিহার্য। ধরুন, একটি প্রজেক্টে কাজ করার সময়, একজন টিম মেম্বার তার দায়িত্ব পালন করতে ভুলে গেছে। আপনি যদি তাকে কঠোরভাবে সমালোচনা না করে, বরং নম্রভাবে তাকে তার ভুলটি ধরিয়ে দেন এবং সঠিক পথ দেখান, তাহলে সে তার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও ভালোভাবে কাজ করবে। এর ফলে, পুরো টিমের মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং টিম স্পিরিট আরও শক্তিশালী হবে।
সাট্যা নাডেলা, Microsoft-এর সিইও, তার দলের সদস্যদের মধ্যে নম্রতা ও সহানুভূতির চর্চা উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “Empathy makes you a better innovator. If you get that, you’ll get to the point where you’ll be an innovator.” তার এই নীতি Microsoft-এর টিমকে আরও উদ্ভাবনী এবং সহযোগিতামূলক হতে সহায়তা করেছে।

সৌজন্যতা ও নম্রতা কর্পোরেট জীবনের একটি মৌলিক অংশ, যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সফলতার জন্য নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগত উন্নতির জন্যও অপরিহার্য। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক কর্পোরেট জগতে এই গুণগুলোকে ধারণ করতে পারা মানেই কর্মক্ষেত্রে একজন সফল পেশাদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সুতরাং, আমরা যদি আমাদের পেশাগত জীবনে সৌজন্য ও নম্রতার চর্চা করতে পারি, তাহলে তা শুধু আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আমাদের প্রতিষ্ঠানকেও সমৃদ্ধ করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে উদ্যোক্তা জন সাখাওয়াত চৌধুরী'র NK-Venture-Capital